Advertisement

header ads

তুমি ফেসবুক চালাও নাকি ফেসবুক তোমাকে চালায়!(১ম পর্ব)

★ ★তুমি ফেসবুক চালাও নাকি ফেসবুক তোমাকে চালায়? ★ ★
( ১ম পর্বঃ কেন এই তীব্র আকর্ষণ? )

ফেসবুক। অতিপরিচিত একটি নাম।বর্তমান সময়ে এর জনপ্রিয়তা এক কথায় আকাশচুম্বী।ভাল মন্দ সব মিলিয়েই আর কোনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এর মত সর্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা পায়নি,খুব শীঘ্রই কেউ পাবে এমন সম্ভাবনাও কম।জনমত তৈরিতে কিংবা অনলাইন শিক্ষা ও বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে ফেসবুক একটি চমৎকার প্লাটফর্ম, অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর নেতিবাচক প্রভাব ভাল দিক গুলোকে ছাপিয়ে যায়। বিশেষ করে বিগত কয়েক বছরের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করলে পরিষ্কার বোঝা যাবে যে,মাদক বা নেশাদ্রব্যের মত এটিও একটি বিশেষ জনগোষ্ঠীকে ধীরে ধীরে আসক্ত করে ফেলছে,যার বেশ বড় অংশ জুড়ে রয়েছে সম্ভাবনাময় তরুণেরা।
এখন প্রশ্ন হলো
→কী আছে এই ফেসবুকে, যা সবাইকে মরীচিকার মত আকর্ষণ করে? 
→মানুষের সাইকোলজির ওপর এর ক্ষতিকর প্রভাবগুলোই বা কি?
→কীভাবে মুক্তি পাওয়া যাবে এই আসক্তি থেকে?
কোনো সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে চাইলে এর মূলে গিয়ে কার্যকারণ বিশ্লেষণ করার প্রয়োজন পড়ে।
তাই, আজ প্রথম পর্বে আমরা দেখব, ঠিক কি কি কারণে ফেসবুক মানুষের মনকে এতটা তীব্রভাবে টানতে পারছে, 
অর্থাৎ ফেসবুক আসক্তির কারণ গুলো কি-
◙ যান্ত্রিক হয়েও মানবিকঃ 
জন্মগতভাবে যান্ত্রিক হলেও ফেসবুকের গঠণ-কাঠামো মানুষের সাইকোলজির সাথে অনেক বেশিই সামঞ্জস্যপূর্ণ। এর সবথেকে বড় কারণ হল- আমরা , অর্থাৎ ব্যবহারকারীরা ফেসবুককে যেভাবে সাজাই,যা লিখি, যা শেয়ার করি- ফেসবুক আসলে সেটাই।আমাদের কন্ট্রিবিউশন গুলোই ধীরে ধীরে ফেসবুককে বর্তমান অবস্থায় নিয়ে এসেছে।সত্যি বলতে এর বাইরে ফেসবুকের নিজস্ব পরিচয় বলতে যা রয়েছে তা খুব সামান্যই।
আর মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি হলো সে অন্যান্য মানুষের কর্মকান্ড সম্পর্কে জানতে চাইবে,সাথে জানাতে চাইবে নিজের ব্যাপারগুলোকেও।ফেসবুক এই সাইকোলজিকাল ফ্যাক্ট টাকেই কাজে লাগিয়েছে জাস্ট, আর কিছু নয়। 🙂
সহজ কথায়, ফেসবুকে ব্যবহারকারীদের অংশগ্রহনের ক্ষেত্রটা অত্যন্ত ব্যাপক এবং এর মূল শক্তির জায়গা এটাই। 
◙ ফেসবুকের বুদ্ধিমত্ত্বাঃ
ফেসবুক যে আপনাকে শুধু এর ভেতর ঢুকিয়ে দিয়ে নিজে চুপচাপ বসে থাকে এমনটা নয়। বরং আপনার আচার-আচরণ,পছন্দ-অপছন্দ ইত্যাদি নিয়ে রীতিমত গবেষণা করে সে, এবং এর ওপর ভিত্তি করেই নেক্সট টাইম আপনি যখন তার কাছে আসবেন তাকে কেমন রূপে দেখতে পাবেন সেটা সাজিয়ে ফেলে।
অর্থাৎ, আপনার যে বিষয়গুলোর প্রতি আকর্ষণ রয়েছে ফেসবুক সেগুলোকেই আপনার সামনে আনার চেষ্টা করে,অন্যদিকে অপছন্দের জিনিশ গুলোকে যথাসম্ভব পেছনে রাখে।
এখন আপনিই বলুন, যে বন্ধুটা আমাদের ভাল মন্দ নিয়ে এতটা ভাবে, তাকে পছন্দ না করে উপায় আছে? 😃
◙ একাকিত্বে সঙ্গী আমারঃ
একটি সাম্প্রতিক জরিপ বলছে,আমেরিকায় বিগত ১০ বছরের সুইসাইড কেস গুলোর শতকরা ৭২ ভাগের পেছনে কারণ ছিল ব্যক্তিগত একাকিত্ব এবং এর ফলশ্রুতিতে বেড়ে ওঠা হতাশা। জরিপের সত্যতা কতটুকু সেটা নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে, কিন্তু একাকিত্বের সময়টাতে একজন সাধারণ মানুষ কতটা তীব্রভাবে অসহায় বোধ করে এবং কারও কারও জন্য এটা যে সহ্যাতীত হয়ে উঠতে পারে সে বিষয়ে নিশ্চয়ই আমাদের ব্যক্তিগত এবং পারিপার্শ্বিক অভিজ্ঞতা সাক্ষ্য দেবে।
এখন, একটা প্রেক্ষাপট চিন্তা করুন, আপনি বাসায় একা। কথা বলার মত কেউ নেই, তাই একাকীত্ব দূর করার জন্য নিকটস্থ পার্ক বা রাস্তায় চলে গেলেন এবং সেখানে একজন অপরিচিত মানুষকে অনুরোধ করে বসলেন আপনার সাথে কিছুক্ষণ গল্প করার জন্য যাতে আপনার একাকিত্ববোধ টা কেটে যায়।
ধরে রাখতে পারেন, নব্বই শতাংশ(বা তারও বেশি) ক্ষেত্রে আপনার এই অনুরোধ টাকে স্বাভাবিক ভাবে দেখা হবে না,এমনকি কেউ কেউ আপনাকে মানসিক ভারসাম্যহীন ভেবেও বসতে পারে। 😑
কিন্তু আপনি এই একই অনুরোধ ফেসবুকে কয়েকজনকে ইনবক্স করে দেখুন, এবার আপনার প্রস্তাব প্রত্যাখাত হওয়ার সম্ভাবনা অর্ধেকের ও নিচে নেমে আসবে।কারণ আপনার মত আরও অনেকেই একাকিত্ব বা একঘেয়েমিতা দূর করার জন্য ফেসবুকে ঘুরছেন,ফলে তাদের কাছে ব্যাপারটাকে মোটেই অস্বাভাবিক মনে হবে না। তাই বাস্তব জীবনে আপনি যতটা একাকী ভার্চুয়াল জগতে ঠিক ততটা নন।
এছাড়া একাকিত্ব দূর করার উদ্দেশ্যে একজন মেয়ের জন্য রাস্তাঘাট বা পার্কে অপরিচিত কারও সাথে গল্প করতে যাওয়াটা বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে নিশ্চয়ই নিরাপদ কিছু নয়। 
এক্ষেত্রেও ফেসবুক বাজিমাত করেছে। অপর প্রান্তের মানুষটির সাথে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখেই আপনি চমৎকার আলাপ চালিয়ে যেতে পারবেন, এমনকি চাইলে সেটি কেউ কারও মুখ দর্শন পর্যন্ত না করে।তাই একজন মেয়েকে এক্ষেত্রে আর নিরাপত্তার দিকটা নিয়ে খুব বেশি দুশ্চিন্তা করতে হচ্ছে না। 🙂
সুতরাং,এটা বলাই যায় যে, ফেসবুক সাময়িক সময়ের জন্য হলেও মানুষের একাকিত্ব দূর করতে ভূমিকা রাখছে।
◙ ফেসবুক খুলুন,একঘেয়েমিতা ছাড়ুনঃ 
একটানা কাজ করতে করতে বিরক্ত হয়ে উঠেছেন?পড়াশোনায়একঘেয়েমি ভাব চলে এসেছে?কিংবা হাতের কাছে সময় কাটানোর মত কিছু পাচ্ছেন না? এ অবস্থায় খুব দ্রুত মনটাকে রিফ্রেশ করতে চাইলে ফেসবুকের থেকে সহজলভ্য এবং কার্যকরী মাধ্যম পাওয়াটা অনেকের জন্যই কঠিন।এমনকি জাস্ট কয়েক মিনিটের চ্যাটিং, নিউজ ফিড স্ক্রলিং,কমেন্টিং কিংবা নিজের মানসিক অবস্থা জানিয়ে স্ট্যাটাস আপডেট করা- এসবই আজকাল কার ফেসবুক ব্যবহারকারীদের একঘেয়েমিতা দূর করার পদ্ধতি হিসেবে প্রচলিত হয়ে গিয়েছে।আর সাম্প্রতিক সময়ে ফোন কম্পানি গুলো ফেসবুক কে বিনামূল্যে ব্যবহারের ব্যবস্থা করে দেওয়ায় মানুষ এর বিকল্প কিছু ভাবার চেষ্টাও করছে না খুব একটা। 
◙ গোপনীয়তাঃ 
সবক্ষেত্রে না হলেও , কিছু কিছু বিষয়ে মানুষ গোপনীয়তা বজায় রাখতে পছন্দ করে। যেমন ধরুন, আপনি একজনের প্রোফাইল থেকে প্রয়োজনীয় কোনো তথ্য সংগ্রহ করছেন , কিংবা কারও আপলোড করা ছবি দেখছেন ইত্যাদি।অথচ আপনার এই কর্মকান্ডের ব্যাপারে যদি ব্যক্তিটি জানতে পারত, আপনি হয়ত এসব কিছুই করতে চাইতেন না। এদিক থেকে ফেসবুক আপনাকে যথাযথ গোপনীয়তা বজায় রাখার নিশ্চয়তা দিচ্ছে, অর্থাৎ আপনি চাইলেই এখানে একজন “অদৃশ্য পর্যবেক্ষক” হয়ে যেতে পারবেন; হ্যারি পটারের সেই invisible cloak এর কোনো প্রয়োজন পড়বে না। 😃
◙ গুরুত্বপূর্ণ আমিঃ 
একজন তীব্র ফেসবুক বিরোধী ব্যক্তিও এটা নির্দ্বিধায় স্বীকার করে নেবে যে, ব্যক্তিগত কোনো মতামত বা চিন্তা ভাবনা ফেসবুকে যত দ্রুত এবং যত বেশি মানুষের কাছে পৌছানো সম্ভব, অন্য কোনো যোগাযোগ মাধ্যমে এমনটা সম্ভব নয়।বর্তমানে মত প্রকাশের জন্য ফেসবুক তাই সবার পছন্দের একটি জায়গা। এমনকি বাস্তব জীবনে প্রচন্ড চুপচাপ এবং অন্তর্মুখী মানুষটিকেও ফেসবুকে এসে পুরোদস্তুর বক্তায় পরিণত হতে দেখা যায়। 😃
ফেসবুক ব্যবহারকারীরা পোস্ট,স্ট্যাটাস বা কমেন্টের মাধ্যমে তাদের চিন্তা ভাবনা গুলো প্রতিনিয়ত প্রকাশ করছে।পরবর্তিতে তাদের এই চিন্তা ভাবনা গুলোকে বাকি মানুষ কীভাবে নিচ্ছে সেটা পর্যবেক্ষণ করছে,এবং তাঁর ওপর ভিত্তি করে নিজের গ্রহণযোগ্যতা যাচাই করছে।তবে এই দৃষ্টিভঙ্গি টা আসলেই কতটা যৌক্তিক, সেটা এ পর্বের আলোচনার বিষয়বস্তু নয়, এ নিয়ে পরবর্তী পর্বে আলোচনা করা যাবে।
আজকের মত কথা বার্তা এখানেই শেষ করছি।এ পর্বে ফেসবুকের প্রতি আকর্ষণ তৈরির কারণ গুলো নিয়েই শুধুমাত্র আলোচনা করার লক্ষ্য ছিল।২য় পর্বে মানুষের সাইকোলজির ওপর ফেসবুকের নেতিবাচক প্রভাবসমূহ নিয়ে কিছু কথা বলার চেষ্টা করব।
লেখাটি পড়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।

ফেসবুকে আমি→জোবাইর কনক  

Post a Comment

0 Comments