Advertisement

header ads

তুমি ফেসবুক চালাও নাকি ফেসবুক তোমাকে চালায়!(২য় পর্ব)

★★ তুমি ফেসবুক চালাও নাকি ফেসবুক তোমাকে চালায়? ★★
(২য় পর্ব : মানুষের মনের ওপর অদৃশ্য কালোহাত )

১ম পর্বে আমরা দেখার চেষ্টা করেছি, কীভাবে ফেসবুক মানুষের মনকে তীব্রভাবে আকর্ষণ করতে সক্ষম হচ্ছে। আজ ২য় পর্বে থাকছে, মানুষের সাইকোলজির ওপর ফেসবুকের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে কিছু কথাবার্তা। 
(১ম পর্বের লিংক কমেন্ট সেকশনের শুরুতে দেওয়া হয়েছে)
-------------------------------------------------------------------------
◙ পারস্পরিক বিশ্বাস ও সম্পর্কের অবনতিঃ
আচ্ছা,বলুন তো, ধূর্ত লোকজনের আনাগোনা কোথায় বেশি হওয়া সম্ভব-ক্যান্টনমেন্ট এর ভেতর নাকি কাঁচা বাজারে?
স্বাভাবিকভাবেই কাঁচা বাজারে।কেনো? কারণ কাঁচা বাজারে চাইলেই যে কেউ যেতে পারে কিন্তু ক্যান্টনমেন্টের ভেতর প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রিত। 🙂
এবার চিন্তা করুন, ফেসবুক একটি ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম‘ হওয়া সত্ত্বেও এতে প্রবেশ করতে চাইলে একজন ব্যক্তিকে ঠিক কতটুকু মানবিক/সামাজিক যোগ্যতাসম্পন্ন হতে হয়?উত্তর- শুন্য; ফেসবুকে একাউন্ট খুলতে এসবের কিছুই প্রয়োজন পড়ে না। আর এজন্যই এ জগতে প্রতারক ও ছদ্মবেশী ব্যবহারকারীর সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে।এমনকি বাস্তব জীবনে গুরুতর মাত্রার চরিত্রহীন একজন ব্যক্তিও পারবে ফেসবুকে নিজেকে নিপাট ভদ্রলোক হিসেবে উপস্থাপন করতে। এ সূযোগ ফেসবুক তাকে অবলীলায় দিয়ে দিচ্ছে। 
ফলশ্রুতিতে প্রতারণা ও বিশ্বাস ভঙ্গের মত ঘটনা গুলো অহরহ ঘটে চলেছে এখানে।এতে ভুক্তভোগী ব্যক্তিটি মানুষের ওপর যেমন বিশ্বাস হারিয়ে ফেলছে , আবার কখনো কখনো নিজের সাথে এরূপ প্রতারণার প্রতিশোধ একইভাবে আরেকজনের ওপর নিচ্ছে।এছাড়া বিশ্বাসঘাতকতা সহ্য করতে না পেরে আত্মহননের পথ বেছে নিতেও দেখা যায় কাউকে কাউকে।এক কথায়,মানুষের পারস্পরিক বিশ্বাসের জায়গাটিতে ফেসবুক একটি ভয়াবহ রকমের চিড় সৃষ্টি করছে।
◙ সস্তা খ্যাতি লাভের মোহঃ
কম সময়ে ও অল্প পরিশ্রমে বিখ্যাত হয়ে উঠতে চান?ফেসবুকের মত সহজ এবং অভাবনীয় জায়গা ২য়টি পাবেন না। 
কিন্তু প্রশ্ন হল, এই সহজে পাওয়া খ্যাতির দৌড় ঠিক কতদূর পর্যন্ত ?
মানুষের একটি সহজাত প্রবৃত্তি হচ্ছে, সে বাকিদের কাছ থেকে গুরুত্ব পেতে চাইবে।অন্যদের মাঝে আলোচিত হওয়ার আকাঙ্ক্ষাটিও তার ভেতরে অবচেতনভাবে কাজ করে।এখানে, লক্ষণীয় বিষয় হলো,আপনি কিন্তু চাইলে দুই উপায়ে আলোচিত ব্যক্তিতে পরিণত হতে পারেন-
(১)সামগ্রিক অর্থে ভাল কোনো কাজ করে অথবা 
(২)অন্যদের দৃষ্টিতে উদ্ভট/আপত্তিকর কিছু করে।
যদি একজন নিয়মিত ফেসবুক ব্যবহারকারী হয়ে থাকেন, তাহলে এতদিনে আপনার বুঝে ফেলার কথা উপরের কোন কারণটির জন্য একজন লোক/ একটা বিষয় দ্রুত এবং বেশি পরিমানে ভাইরাল হয়।
হ্যা, আমি ২য় পয়েন্টের দিকেই ইঙ্গিত করছি। 🙂
শুধুমাত্র সস্তা খ্যাতির মোহে পড়ে আজকাল অনেকেই নিজের হিতাহিত জ্ঞানটুকু হারিয়ে ফেলছে, আর তাদের বিকৃত/অসামাজিক কর্মকান্ড গুলো ছড়িয়ে দিচ্ছে ফেসবুকে।
ফলাফল?
একটি সম্ভাবনাময় প্রজন্মের বিরাট অংশ গড়ে উঠছে মানসিক প্রতিবন্ধী হিসেবে।
◙ ধৈর্যহীনতা এবং পরিশ্রমে অনীহাঃ
অতিরিক্ত ফেসবুক ব্যবহারকারীদের মধ্যে-পরিশ্রমের মাধ্যমে সাফল্য অর্জন এবং ধৈর্য ধরে কাজ করবার প্রতি তীব্র অনীহা তৈরি হয়।আর এর পেছনেও সেই সস্তায় খ্যাতি লাভের ইচ্ছাটাই প্রধানত দায়ী।
সাম্প্রতিক একটি জরিপ বলছে, ইন্টারনেট ব্যবহারকারী টিনএজার দের শতকরা ৯৪ ভাগ ফেসবুক ব্যবহার করে।
এখন নিজে একবার ভাবুন, যখন সদ্য কৈশোরে প্রবেশ করা একটি ছেলে বা মেয়ে ফেসবুকের জগতে ঢুকে দেখতে পাবে জাস্ট কয়েকটা সেন্টিমেন্টাল স্ট্যাটাস আপডেট, নিজের কিছু আকর্ষণীয় ছবি আপলোড করে কিংবা ফেসবুক লাইভে এসে রাতারাতি বিখ্যাত বনে যাওয়া যাচ্ছে তখন এদের ভেতর কয়জনই বা অযথা(!) ধৈর্য ধরে দিনের পর দিন বইয়ের ভেতর মুখ গুজে ভবিষ্যতের কোনো এক সময়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার স্বপ্ন দেখবে? এই বয়সে এদের সবার মধ্যে ভবিষ্যত নিয়ে এতটা সুদূরপ্রসারী চিন্তা-ভাবনা করবার মত মানসিকতা তৈরি হবে, এটা আশা করাটাও অনুচিত। তাই নিজেকে গড়ে তোলার এই উপযুক্ত সময়টাতে তারা খ্যাতি অর্জনের সবথেকে সহজ কিন্তু সম্পূর্ণ ভ্রান্তিকর রাস্তাটি ফেসবুকের মাধ্যমে খুঁজে নিচ্ছে, আর সেই সাথে নিজের সম্ভাবনাময় ক্যারিয়ারটাকেও ধীরে ধীরে শ্বাসরোধ করে মেরে ফেলছে।
◙ মনোযোগহীনতাঃ 
ফেসবুকে বিষয়বস্তু গুলোকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয় যাতে ব্যবহারকারীরা খুব বেশি কষ্ট না করে কয়েক সেকেন্ড দেখেই সেটার অর্থ বুঝে ফেলতে পারে।
শর্টকাটে বুঝে ফেলতে চাওয়ার এই পরোক্ষ অভ্যাস টাই বাস্তব জীবনে আমাদেরকে কোনো বিষয় সময় নিয়ে কয়েকবার মনোযোগ দিয়ে পড়ার প্রতি অনাগ্রহ তৈরি করে দেয়।ফলে কোনো কিছু চট করে দ্রুত একবার পড়ে বুঝতে না পারলে সাথে সাথে মনে বিরক্তি এবং হতাশা চলে আসে। 
◙ ব্যক্তিগত অসন্তোষ ও একাকীত্বঃ
স্পর্শকাতর(Psychologically sensitive) ব্যক্তিরা ফেসবুকে তাদের চারিপাশের মানুষ গুলোকে এতটা হাসিখুশি থাকতে দেখে নিজের জীবন নিয়ে অসন্তুষ্টিতে ভুগতে পারে।এছাড়া, ফেসবুকে একজন ব্যক্তি চাইলেই খুব সহজে একসাথে অনেক বেশি মানুষের সাথে যোগাযোগ করতে পারছে বিধায়, কেউ কেউ বাস্তব জীবনে তার বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনদের সাথে সরাসরি(Physically) দেখা সাক্ষাত ও যোগাযোগ করার প্রতি অনীহা বোধ করতে পারে।এই দৃষ্টিকোণ থেকে ফেসবুক তাদেরকে সামাজিক করার বদলে প্রকৃত অর্থে অসামাজিক করে ফেলছে।
আজকের মত এখানেই শেষ করব।তবে যাবার আগে আপনাদের একটি প্রবাদ মনে করিয়ে দিতে চাই- “অতিরিক্ত যেকোনো কিছুই খারাপ“। ফেসবুক ব্যবহারের ক্ষেত্রেও এই কথাটি শতভাগ প্রযোজ্য। সহনীয় মাত্রার মধ্যে ব্যবহার করলে, ফেসবুক নিঃসন্দেহে আপনার জীবনের একটি চমৎকার অনুষঙ্গ হতে পারে।
লেখাটি পড়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।
ভাল থাকবেন। 🙂.

ফেসবুকে আমি→জোবাইর কনক 

Post a Comment

0 Comments